মাসুদের পরিবারের জন্য সহায়তা চাইল আওয়ামী লীগ; দল কী করে, উঠল প্রশ্নও

Photo of author

By Nahid

শেয়ার করুন

সহায়তা চাইল আওয়ামী লীগ
নিহত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে গত শনিবার মারধর করে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর মাত্র পাঁচ দিন আগে ফুটফুটে কন্যাসন্তানের বাবা হয়েছিলেন মাসুদ। তাঁর পরিবারের জন্য অর্থসহায়তা চেয়েছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে আজ সোমবার সন্ধ্যায় একটি পোস্টে দলের সমর্থক ও নেতা-কর্মীদের মাসুদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। এতে একটি ব্যাংক হিসাব নম্বর এবং বিকাশ/নগদ নম্বর দেওয়া হয়েছে। নম্বরগুলো মাসুদের স্ত্রী বিউটি আরা বেগমের বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অবশ্য পোস্টের নিচে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কেন মাসুদের পরিবারকে সহায়তা করছে না? দলটির সম্পদশালী কোনো নেতা কেন মাসুদের পরিবারের দায়িত্ব নিচ্ছেন না? তাঁরা তো গত ১৫ বছরে অনেক অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে পোস্টটি দেওয়া হয় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে। রাত সাড়ে আটটার দিকে দেখা যায়, পোস্টটিতে প্রায় ৩ হাজার ৩০০টি মন্তব্য করা হয়েছে। প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সাড়ে ২১ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী।

মনির হোসেন নামের একজন লিখেছেন, ‘আমরা মাসুদ ভাইয়ের পরিবারকে অবশ্যই টাকা দিয়ে সহযোগিতা করব। কিন্তু আমার প্রশ্ন, যাঁরা দলের নাম বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা বানিয়েছেন, তাঁরা কি আজ এক মাসুদ ভাইয়ের পরিবারের পাশে দাঁড়াইতে পারেন না।’

মাসুদুর রহমান নামের একজন লিখেছেন, ‘দলের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নিন।’

২০০৯ সালে সরকারে আসা আওয়ামী লীগ টানা সাড়ে ১৫ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল। এ সময় দলের আয় বেড়েছে। আবার দলটির নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে আছে অর্থ পাচারের অভিযোগ।

আওয়ামী লীগ গত ২৭ জুন নির্বাচন কমিশনে ২০২৩ সালের আয় ও ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়। এতে উল্লেখ করা হয়, গত বছর আওয়ামী লীগের আয় হয় ২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ২০২২ সালের তুলনায় আয় ও ব্যয় বেড়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হয়। দলের নেতাদের অনেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। কেউ কেউ বিদেশে চলে গেছেন।

ফেসবুকে কেউ কেউ বলছেন, দলের নেতারা চাইলে মাসুদের পরিবারকে দেশে-বিদেশে যেকোনো জায়গা থেকে অর্থসহায়তা করতে পারেন।

ফেসবুকে আওয়ামী লীগের পক্ষে বিভিন্ন সময় অবস্থান নেওয়া জসিম উদ্দিন নামের একজন লিখেছেন, যাঁরা এই দুর্দিনে মাঠে নেই, কর্মীদের পাশে নেই, একজন মাসুদের দায়িত্ব নিতে পারেন না, তাঁরা যেন আগামী ২০ বছরেও মাঠে আসতে না পারেন। যাঁরা মানবিকভাবে কাজ করবেন, তাঁরাই ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবেন।

অবশ্য অনেকেই মাসুদের পরিবারকে সহায়তা করবেন বলে ফেসবুকে জানিয়েছেন। কেউ কেউ টাকা পাঠিয়ে ডিজিটাল রসিদের ছবিও দিয়েছেন।

মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। ২০১৪ সালে হামলা চালিয়ে তাঁর ডান পায়ের নিচের অংশ গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। বাঁ পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেটে দেওয়া হয়েছিল তাঁর হাতের রগ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে একটি চাকরি চেয়ে ২০২২ সালের শেষ দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন মাসুদ। ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর তাঁকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিয়োগপত্র পেয়ে ২২ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগ দেন তিনি। সেই থেকে তিনি এ পদেই চাকরি করতেন। ৩ সেপ্টেম্বর মেয়ের বাবা হন মাসুদ।

৭ সেপ্টেম্বর হামলা চালিয়ে মাসুদকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। নবজাতক সন্তানকে নিয়ে মাসুদের স্ত্রী তাঁর লাশ বুঝে নিতে গেছেন, তেমন একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। মারধরের পর মাসুদ পানি চেয়েছিলেন, সেই ভিডিও অনেকে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।


শেয়ার করুন

Leave a Comment